Skip to main content

হযরত ঈশা (আঃ) এর আগমনের সময়

আমরা পৃথিবীর প্রায় শেষ প্রান্তে এসে পড়েছি।

আমরা বিশ্বাস করি যে, এই জগতের শেষে হযরত ঈশা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা করে মানুষকে বাঁচাতে ফিরে আসবেন। এটি পুনরুত্থান দিনের আগে একটি বড় চিহ্ন। কিন্তু তিনি কখন ফিরে আসবেন তা আমরা জানি না। এই তথ্য জানা মানে এই বিশ্বের শেষ সময় সম্পর্কে জানা। সর্বশ্রেষ্ঠ বই, তথ্যবহুল, জ্ঞানগর্ভ পবিত্র আল-ক্বোরয়ান হযরত ঈশা (আঃ) এর প্রত্যাবর্তনের সময় সম্পর্কে একটি ইঙ্গিত দিয়েছে এবং এটি হলো ২০৭১ সাল।

নিচে ধারাবাহিকভাবে ২০৭১ সাল হওয়ার ব্যাখ্যা প্রদান করা হলোঃ

এই আলোচনার মূলত দুইটি অংশ। এক, ১৯ সংখ্যার গুরুত্ব এবং দুই, হ্যালির ধুমকেতুর আগমন।

১৯ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা সংখ্যা। বিশ্বের অনেক কিছুই ১৯ এর উপর নির্ভর করে।

১৯ সংখ্যার বিষয়ে পবিত্র ক্বোরয়ানেও বলা আছে। সুরা আল-মুদ্দাসসির এর ৩০ নম্বর আয়াতে এটা বলা হয়েছে। আল-মুদ্দাসসির অর্থ বস্ত্রাবৃত বা গুপ্ত রহস্য। সুতরাং, এই সুরাতে কিছু গুপ্ত রহস্য বা গুপ্ত কোন তথ্য আছে। যখন ইহুদী পন্ডিতেরা জাহান্নামে নিয়োজিত ফেরেশতাদের সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো, তখন আল্লাহ তায়ালা ক্বোরয়ানে এটার উত্তর অনেক তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রদান করেন। যে উত্তর শুধুমাত্র জাহান্নামে নিয়োজিত ফেরেশতাদের সংখ্যা সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়- আরও অনেক কিছুই নির্দেশ করে। এই ১৯ সংখ্যা সম্পর্কে ইহুদী পন্ডিতদেরও জানা ছিল। এইজন্য এই আয়াতের পরের আয়াতে তা বলা হয়েছে যে, এটা জানার পরে এতে কিতাবীরাও অর্থাৎ ইহুদী খ্রিস্টানরাও দৃঢ় বিশ্বাসী হবে।

“ইহা ১৯ এর উপর।”
(৭৪ নম্বর সুরাঃ আল-মুদ্দাসসির, আয়াতঃ ৩০)

“আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ফেরেশতাদেরকেই নির্বাচন করেছি। আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যেই তাদের এই সংখ্যা নির্ধারণ করেছি-যাতে কিতাবীরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং কাফেররা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা (অর্থাৎ “ইহা ১৯ এর উপর” এই কথার দ্বারা) কি বোঝাতে চেয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে চালান। আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। এটা তো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।” (৭৪ নম্বর সুরাঃ আল-মুদ্দাসসির, আয়াতঃ ৩১)

আসলে “ইহা ১৯ এর উপর” এই কথার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা অনেক কিছুই বুঝিয়েছেন। ১৯৭৪ সালে ১৯ এর ব্যাখ্যা প্রদান করেন মিশরীয়-আমেরিকান বায়োকেমিস্ট রাশাদ খলিফা।

১৯ সংখ্যার গুরুত্বঃ

১) আরবী বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মধ্যে ১৯ টি অক্ষর আছে। ক্বোরয়ানের প্রতিটি সুরা এই ১৯ অক্ষর সম্বলিত বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু- শুধুমাত্র ৯ নম্বর সুরা ব্যতীত। অর্থাৎ ক্বোরয়ানের শুরু এই ১৯ দিয়ে। সুতরাং, এটি “ইহা ১৯ এর উপর” এই আয়াতের একটা ব্যাখ্যা।

২) যেকোন কাজ করতে মুসলমানরা বিসমিল্লাহ বলে থাকে। অর্থাৎ সব কাজের বরকত এই ১৯ অক্ষর সম্বলিত বিসমিল্লাহের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, এটি “ইহা ১৯ এর উপর” এই আয়াতের একটা ব্যাখ্যা।

৩) ক্বোরয়ানের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক সংখ্যায় ১৯ এর গুণিতক।

৪) হ্যালির ধুমকেতু প্রায় ৭৬ বছর পর পর ফিরে আসে যা ১৯ এর ৪ গুণ।

৫)মায়েদের গর্ভাবস্থার গড় সময় ৩৮ সপ্তাহ যা ১৯ এর দ্বিগুণ। ৪০ সপ্তাহের মধ্যে প্রথম ২ সপ্তাহকে গর্ভাবস্থার অন্তর্ভুক্ত ধরা হয় না।

৬) মানব ইতিহাসে ১৯ সংখ্যা সম্বলিত সালেই অর্থাৎ, ১৯০০ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যেই সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য আবিস্কার সংঘটিত হয়েছে। যেমন, রেডিও, টেলিভিশন, প্যারসোনাল কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, সাবমেরিন, অটোমোবাইল, উড়োজাহাজ, রকেট, স্যাটেলাইট, নিউক্লিয়ার শক্তি, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদী।

৭) খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্মে ১৯ এর গুরুত্বঃ
প্রতি ১৯ বছর পর পর পৃথিবী, সূর্য এবং চন্দ্র একই অবস্থানে ফিরে আসে। এটার উপর ভিত্তি করে হিব্রু ক্যালেন্ডার গঠন করা হয়েছে যা ইহুদীরা মেনে চলেন। ১৯ বছর পর পর সৌর হিসাব আর চন্দ্র হিসাব সমতানে চলে আসে।

চার্চের ইতিহাসে একটি পর্যবেক্ষণ দেখায় যে, অনেক ঘটনা এবং সময়কাল প্রকৃতপক্ষে ১৯ বছরের নিদর্শনকে দেখিয়েছে। যেমন-

৩১ খ্রিস্টাব্দ (সত্য চার্চের শুরু) থেকে ৫০ খ্রিস্টাব্দ (পল ইউরোপে যান) হল ১৯ বছরের চক্র।

৫০ খ্রিস্টাব্দ (পল ইউরোপে যান) থেকে ৬৯ খ্রিস্টাব্দ (জেরুজালেম চার্চটি পেল্লার কাছে চলে যায়) হলো ১৯ বছরের চক্র।

১৯৩৪ (ফিলাডেলফিয়া দরজা খোলা) থেকে ১৯৫৩ (ইউরোপে সম্প্রচার শুরু) হলো ১৯ বছরের চক্র।

উপরের এই তিনটি তথ্যের উৎস হচ্ছেঃ
Website: The Restored Church of The God

৮) ৮ ও ১৯ এই জোড়া সংখ্যার গুরুত্বঃ

ক) ১৯ হচ্ছে ৮ম মৌলিক সংখ্যা।

খ) আমাদের হাতের তালু ও আংগুল মিলে মোট ১৯ টা হাড় আছে। বৃদ্ধাংগুলে ৩ টা আর অপর চারটি আংগুলে ৪ টা করে মোট ১৯ টা। এই ১৯ টা হাড় কব্জিতে অবস্থিত ৮ টি হাড়ের উপর অবস্থান করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত কাজ এই হাড়গুলোর উপর নির্ভর করে। লেখা, অঙ্কন, কম্পিউটারে টাইপ করা, কোন কিছু ধরা, কোন কিছু বানানো, খাওয়া। এগুলো “ইহা ১৯ এর উপর” এর আরেকটি নিদর্শন। বিশ্ব এত উন্নত করার পেছনে এই ১৯ টি হাড়ের গুরুত্ব অনেক। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিন্স শুধুমাত্র তার হাতের আংগুল নাড়াতে পারতেন।

গ) ক্বোরয়ানে একটানা প্রথম ৮ টি সুরাতে ১৯ অক্ষর সম্বলিত বিসমিল্লাহ আছে। এর পর নবম সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ নেই। যদি নবম সুরাকে ১ নম্বর ধরি তাহলে ১৯ নম্বর সুরা হয় সুরা নমল যা ক্বোরয়ানে ২৭ নম্বর সুরা। এই সুরার ৩০ নম্বর আয়াতে অতিরিক্ত একটা বিসমিল্লাহ আছে।

হ্যালির ধুমকেতুঃ

হ্যালির ধুমকেতু প্রায় প্রতি ৭৬ বছর পর পর পৃথিবীতে আগমন করে। এই ধুমকেতুর আগমন অনেক সময় ইতিহাসে অনেক বড় বড় ঘটনার ইঙ্গিত দিয়ে গেছে।

খ্রিস্টপূর্ব ১২ তে হ্যালির ধুমকেতু দেখা যায়। এর কয়েক বছর পর হযরত ঈশা (আঃ) এর জন্ম হয়। ৬০৭ সালে হ্যালির ধুমকেতু আসার তিন বছর পর ৬১০ সালে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নবুওয়াত প্রাপ্ত হন। হ্যালির ধুমকেতুর এই আগমন ছিল হযরত ঈশা (আঃ) এর জন্মের পর থেকে ৮ম আগমন। হযরত ঈশা (আঃ) এর জন্মের পর থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত হ্যালির ধুমকেতুর আগমনের সাল হচ্ছে যথাক্রমে ৬৬,১৪১,২১৮,২৯৫,৩৭৪,৪৫১,৫৩০ এবং ৬০৭। এভাবে হযরত ঈশা (আঃ) এর জন্মের পর থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত হ্যালির ধুমকেতু মোট ৮ বার আগমন করে।

গত ১৯৮৬ সালে হ্যালির ধুমকেতু পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে যায়। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে এই আগমন ছিল হ্যালির ধুমকেতুর ১৮তম আগমন। এর পরে হিসাব অনুযায়ী ২০৬১ সালে হ্যালির ধুমকেতু আবার আসবে। আর এই আগমন হবে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে হ্যালির ধুমকেতুর ১৯তম আগমন। সুতরাং, এই ১৯তম আগমনের পর অর্থাৎ ২০৬১ সালের পর বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে আশা করা যায়।

আমরা আগেই দেখেছি ১৯ একটা গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। ১৯ এর উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। ১৯ তম হ্যালির ধুমকেতুর আগমনের পরে কোন বড় ঘটনা “ইহা ১৯ এর উপর” এই আয়াতের আরও একটি ইঙ্গিত।

এখন যাই আসল পয়েন্টে।

পবিত্র ক্বোরয়ানে ১৯ নম্বর সুরার নাম মারইয়াম অর্থাৎ হযরত ঈশা (আঃ) এর মাতা। এই সুরার ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হযরত ঈশা (আঃ) এর জন্মের সংবাদ দিয়েছেন।

“সে (জীবরাঈল আঃ) বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত বার্তাবাহক, যাতে তোমাকে (অর্থাৎ, মারইয়াম আঃ কে) এক পবিত্র পুত্র সন্তানের খবর দিব।” (১৯ নম্বর সুরাঃ মারইয়াম, আয়াতঃ ১৯)

১৯ নম্বর সুরার ১৯ নম্বর আয়াত। ১৯ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা সংখ্যা যে সংখ্যা সম্পর্কে ইহুদী-খ্রিস্টানরাও অবগত। সেই হিসেবে ১৯ নম্বর সুরার এই ১৯ নম্বর আয়াত ক্বোরয়ানে একটা অনন্য এবং অতি গুরত্বপূর্ণ একটা আয়াত। এই আয়াতে বর্ণিত সংবাদ নিশচয়ই কোন বড় ধরনের খবরের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেভাবে এই আয়াত হযরত ঈশা (আঃ) এর পৃথিবীতে প্রথম আগমনের খবর বহন করে- অনুরুপভাবে, এটি হযরত ঈশা (আঃ) এর দ্বিতীয় আগমনের ব্যাপারেও কোন তথ্য প্রদান করছে। যেহেতু, হযরত ঈশা (আঃ) পৃথিবীতে আবার আসবেন এটা আমরা হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি, সেহেতু এই আয়াত দ্বিতীয় আগমনের সময় ইঙ্গিত করছে যা ১৯ সংখ্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত।

সুতরাং, উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট হচ্ছেঃ

১। হ্যালির ধুমকেতুর আগমনের কয়েক বছর পর হযরত ঈশা (আঃ) এর জন্ম।

২। হযরত ঈশা (আঃ) এর জন্মের পর হতে হ্যালির ধুমকেতুর ৮ম আগমনের পর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তি।

৩। আবার, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে হ্যালির ধুমকেতুর ১৯ তম আগমন হচ্ছে ২০৬১ সাল।

সুতরাং, ২০৬১ সালের পর বড় ধরনের সেই ঘটনা হতে পারে হযরত ঈশা (আঃ) এর দ্বিতীয় আগমন যা ১৯ সংখ্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এটি "ইহা ১৯ এর উপর" এই আয়াতের আরও একটি ইঙ্গিত। এছাড়াও, এটি ৮ ও ১৯ সংখ্যার আরও একটি সমাবেশ।

কেউ হয়তো বলতে পারে যে, হযরত ঈশা (আঃ) এর জন্ম সময়কে একটা পয়েন্ট হিসেবে নেয়া হয়েছে, তাহলে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্ম সময়কে পয়েন্ট হিসেবে না নিয়ে নবুওয়াত প্রাপ্তির সময়কে কেন পয়েন্ট হিসেবে নেয়া হলো? কারণ, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত পেয়েছেন, কিন্তু হযরত ঈশা (আঃ) জন্ম থেকেই নবুওয়াত প্রাপ্ত। অর্থাৎ দুই পয়েন্টই নবুওয়াত প্রাপ্তি বা গুরুত্বপূর্ন দ্বায়িত্ব প্রাপ্তির সময় থেকে নেয়া হয়েছে। হযরত ঈশা (আঃ) আবার যে পৃথিবীতে আসবেন- তিনি বেড়াতে আসবেন না-উম্মতী মুহাম্মাদী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব পালন করতে আসবেন। তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন।

আরও কিছু ইঙ্গিতঃ

হযরত ঈশা (আঃ) এর জন্মের পর থেকে ২০৬১ সালে হ্যালির ধুমকেতুর আগমন ৮+১৯=২৭তম আগমন । আল -ক্বোরয়ানে ২৭ তম সুরা হচ্ছে সুরা নমল যা ১৯ অক্ষর সম্বলিত অতিরিক্ত একটা বিসমিল্লাহ ধারণ করে এবং যা ১৯ তম পারার সর্বশেষ সুরা। এই ২৭ তম সুরা নমল কিয়ামতের আলামত এবং কিয়ামতের কিছু বর্ণনা প্রদান করেছে।

এই সুরার কিছু তথ্যঃ

“আকাশে ও পৃথিবীতে এমন কোন গোপন ভেদ নেই, যা এই সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” (২৭ নম্বর সুরাঃ নমল, আয়াতঃ ৭৫)

“এই ক্বোরয়ান বণী ইসরাঈল যেসব বিষয়ে মতবিরোধ করে, তার অধিকাংশ তাদের কাছে বর্ণনা করে।” (২৭ নম্বর সুরাঃ নমল, আয়াতঃ ৭৬)

বনী ইসরাঈল অর্থাৎ ইহুদী ও খ্রিস্টানরা যেসব বিষয়ে মতবিরোধ করে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে হযরত ঈশা (আঃ) এর আগমনের সময় সম্পর্কে যে, কখন উনি আসবেন। সুতরাং, উপরের দুই আয়াত থেকে বলতে পারি ক্বোরয়ানে হযরত ঈশা (আঃ) এর আগমনের সময় সম্পর্কে অর্থাৎ যে বিষয়ে ইহুদী খ্রিস্টানরা মতবিরোধ করে এবং যা একটা গোপন ভেদ- সে সম্পর্কে বর্ণনা আছে।

এই সুরার সর্বশেষ আয়াতঃ

“এবং আরও বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। সত্বরই তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদেরকে দেখাবেন। তখন তোমরা তা চিনতে পারবে। এবং তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আপনার পালনকর্তা গাফেল নন।” (২৭ নম্বর সুরাঃ নমল, আয়াতঃ ৯৩)

হতে পারে এই নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হযরত ঈশা (আঃ) এর আগমন যাকে অনেকে চিনতে পারবে।

সুতরাং, ২৭ নম্বর সুরা হযরত ঈশা (আঃ) এর আগমন সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছে।

উপরের আলোচনা থেকে এই পাওয়া গেল যে, ২০৬১ সালের পর অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে বা হিজরী ক্যালেন্ডারে ১৯ তম হ্যালির ধুমিকেতুর আগমনের পর যেকোন বছর হযরত ঈশা (আঃ) আসতে পারেন।

সম্ভাব্য সাল হতে পারে ২০৭১ঃ

খ্রিস্টপূর্ব ১২ সালে হ্যালির ধুমকেতু আগমনের প্রায় ৮ অথবা ১০ বছর পরে হযরত ঈশা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একই হিসাব যদি আমরা করি তাহলে ২০৬১ সালে হ্যালির ধুমকেতু আসার প্রায় ১০ বছর পর আনুমানিক ২০৭১ সালে আবার হযরত ঈশা (আঃ) আগমন করবেন।

এই ২০৭১ সংখ্যা ১৯ এবং ১০৯ সংখ্যা দুইটির গুণফল এবং ১০৯ সংখ্যাটিও ১৯ এর মত মৌলিক সংখ্যা। সুতরাং, এটি আরও একটি ১ আর ৯ এর সমাবেশ ঠিক যেমন ১৯ নম্বর সুরার ১৯ নম্বর আয়াতের মত যে আয়াতে ঈশা আঃ এর আগমনের খবর দেয়া আছে।

উপরন্ত সুরা নমলের ৭১ নম্বর আয়াতে কাফেরদের কিয়ামত সংঘটনের বা কিয়ামতের আলামত সংঘটনের সময় সংক্রান্ত প্রশ্ন এসেছে-

“তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এই ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে?” (২৭ নম্বর সুরাঃ নমল, আয়াতঃ ৭১)

আর এই আয়াত ২০ নম্বর পারার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ ২০ নম্বর পারা এবং ৭১ নম্বর আয়াত।

পরের আয়াতে এর উত্তর এসেছে-

“বলুন, অসম্ভব কি, তোমরা যত দ্রুত কামনা করছ তাদের কিয়দংশ তোমাদের পিঠের উপর এসে গেছে।“ (২৭ নম্বর সুরাঃ নমল, আয়াতঃ ৭২)

অর্থাৎ আলামত পিঠের উপর এসে গেছে মানে অতি সন্নিকটে চলে এসেছে।

এছাড়াও ২০ নম্বর পারাতে আরও একটি ৭১ নম্বর আয়াত আছে যা সময় সংক্রান্ত এবং কিয়ামতের পূর্বের একটি আলামতের বর্ণনা করে। তা হলো-

“বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না? (২৮ নম্বর সুরাঃ আল-কাসাস, আয়াতঃ ৭১)

আহ! আল্লাহর কি আকুতি! যেন এক মায়ের তার বিপদগামী সন্তানদের সুপথে নিয়ে আনার আকুল আবেদন “তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না?” অসীম ক্ষমতাশালী হওয়ার পরেও তার সৃষ্ট সামান্য একটা মাখলুকের কাছে কি অনুরোধ! এ থেকে আল্লাহর বিনয় বুঝা যায়, ভালোবাসা বুঝা যায়।

কিয়ামতের পূর্বে একটি রাত অনেক দীর্ঘ হবে। মানুষ বলাবলি করবে যে রাত শেষ হচ্ছে না কেন? এরপর পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠবে এবং এই পৃথিবীর লীলা শেষ হয়ে যাবে।

সুতরাং, ২০৬১ সালে হ্যালির ধুমকেতুর (হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে) ১৯তম আগমনের পর যেকোন বছর হযরত ঈশা (আঃ) আসতে পারেন এবং সম্ভাব্য সাল হচ্ছে ২০৭১।

আর হাদিস অনুযায়ী, ঈশা আঃ এর আগমনের ৭ বা ৯ বছর আগে ইমাম মেহেদি (আঃ) আগমন করবেন। অর্থাৎ, ইমাম মেহেদি (আঃ) আগমনের ৭ বা ৯ বছর পর দাজ্জাল আসবে এবং এর কিছু দিন পর দাজ্জালকে বধ করতে হযরত ঈশা (আঃ) আগমন করবেন এবং তিনি ইমাম মেহেদী (আঃ) এর পেছনে নামাজ পড়বেন তার মানে উনাদের দুইজনের মধ্যে সাক্ষাৎ হবে।

Comments

Popular posts from this blog

উনিশ তত্ব উদঘাটন ও উনিশ সংখ্যার গানিতিক কোডিং

 সুরা মুদাসসির এবং ফেরেসতার সংখ্যা উনিশ এবং উনিশ তত্ব উদঘাটন । "সেখানে (জাহান্নামে) নিয়োজিত আছে উনিশ জন ফেরেশতা। আমি ফেরেশতাদেরকে জাহান্নামের প্রহরী রেখেছি কাফিরদের পরীক্ষার জন্য আমি তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি যাতে আহলে কিতাবের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে ঈমানদারদের ঈমান বর্ধিত হয় এবং বিশ্বাসীগন এবং আহলে কিতাব যেন সন্দেহ পোষন না করে । এর ফলে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা ও কাফিররা বলবেঃ আল্লাহ এ বর্ণনা দ্বারা কি বুঝাতে চেয়েছেন ? এইভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন। তোমার প্রতিপালকের বাহীনি সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। এই বর্ণনা তো সমস্ত মানুষের জন্য নিছক উপদেশ । (সূরা মুদ্দাসসির : ৩০,৩১) এই আয়াতে বলা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্যে ১৯ জন ফেরেশ্তা রাখা হয়েছে। আর তাদের সংখ্যাকে কাফেরদের পরিক্ষা করার জন্য নিধারণ করা হয়েছে। একই সাথে কিতাবীদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে আর মুমিনদের ইমান বৃদ্ধির কাজেও লাগবে । তার মানে এখানে ১৯ সংখ্যা দিয়ে আল্লাহ কিতাবীদের ঈমান বৃদ্ধি করেছেন । মিশরের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. রশিদ কোরআন নিয়ে এক ব্যাপক গবেষণা চালিয়

বিপরীত শব্দ এবং সমার্থক শব্দ

বিপরীত শব্দ এবং সমার্থক শব্দ এসেছে সমান কিংবা দ্বিগুনঃ লাভ এবং ক্ষতি = ৯ বার করে এসেছে। গরম এবং ঠান্ডা = ৪ বার করে এসেছে। আশা এবং ভয় শব্দ দুটি এসেছে = ৮ বার। সুবিচার এবং অবিচার = ১৫ বার। দুনিয়া এবং আখেরাত = ১১৫ বার। উপকার এবং অপকার = ২০ বার। ফেরেশতা এবং শয়তান =৮০ বার। গন্তব্যহীন এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল = ২৮ বার। শাস্তি-১১৭ বার, ক্ষমা- ২৩৪ (২*১১৭) বার। বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস = ২৫ বার। গরিবী- ১৩ বার, প্রাচুর্য- ২৬ (১৩*২) বার। ধার্মিক- ৬ বার, নাস্তিক- ৩ বার। পবিত্র এবং অপবিত্র = ৭ বার, অপবিত্রতা এবং নোংরামী = ১০ বার। দয়ালু (রহমত)- ১১৪ বার। দয়াবান (রহিম)- ১১৪ বার, সদয় (রহমান)- ৫৭ বার (৫৭*২=১১৪) বার করে এসেছে। কালু (তারা বললো) এবং কুল (তুমি বল) = ৩৩২ বার। বীজ এবং চারা এবং ফল = ১৪ বার। অশ্লিলতা এবং পথভ্রষ্ট এবং সীমালংঘনকারী = ২৪ বার, পাপ = ৪৮ (২৪*২) বার। সূর্য এবং আলো = ৩৩ বার। খোলামেলা এবং জনসম্মুখে = ১৬ বার। যাদু এবং প্রলুব্ধকারী =৬০ বার। ভাষা এবং উপদেশ = ২৫ বার। ক্ষমা এবং পথ-প্রদর্শক = ৭৯ বার। ন্যায়নিষ্ট এবং পুরুস্কার = ২০ বার। যাকাত এবং আর্শিবাদ = ৩২ বার। সাত বেহেশ্ত এবং বেহেশ্ত ত

পৃথীবির স্হলভাগ ও জলভাগ

বর্তমান বিজ্ঞান নিরীক্ষনের মাধ্যমে দেখিয়েছে পৃথিবীতে স্থলভাগের মোট আয়তনের ২৯ ভাগ আর জলভাগের পরিমান ৭১ ভাগ প্রায়। চলুন দেখি কোরআন কি বলে, কোরআনে সমুদ্র বা জলাধার শব্দটি এসেছে ৩২ বার। ভুমি বা জমি শব্দটি এসেছে ১৩ বার। এদের রিপিটেশন এর পরিমানকে অনুপাতে প্রকাশ করলে পাওয়া যায়- স্থলভাগের পরিমাণ = {১৩/(১৩+৩২)}=২৮.৮৮৮% জলভাগের পরিমান = {৩২/(১৩+৩২)} =৭১.১১১% দেড় হাজার বছর আগের কোন মানুষ কি জানতো পৃথিবীর জলভাগ আর স্থলভাগের অনুপাত কতো ? আল্লাহ আমাদের কুরআন নিয়ে গবেষনা করার তৌফিক দান করুন আমিন । আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মোহাম্মাদ ওয়ালা আলে মোহাম্মাদ